Sun Mercury Venus Ve Ves
বিশেষ খবর
‘লক্ষী’ থেকে লক্ষীপুর, যার আরেক নাম সয়াল্যান্ড  লক্ষীপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে ৫০ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা  ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ  আ’লীগ আবারও ভোট চুরির পরিকল্পনা করছে - লক্ষীপুরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী  শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে বাংলাদেশে দিবাস্বপ্ন দেখার কোনো কারণ নেই - লক্ষীপুরে মাহবুব উল আলম হানিফ 

মেঘনার ভাঙনরোধে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের কাজ শুরুর দাবি

মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলাকে রক্ষায় বরাদ্দকৃত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করার দাবিতে ১৭ কিলোমিটার জুড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ২০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রামগতি-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক সড়কের কমলনগর উপজেলার করুনানগর থেকে তোরাবগঞ্জ পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে ঘণ্টাব্যাপি এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জেএসডি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং কৃষক, শ্রমিক ও জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। একই সময় নিজেদের ভিটে-মাটি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এক ঘন্টা ক্লাস বর্জন করে এবং উপজেলার করুনানগর, হাজিরহাট, লরেন্স, করইতলা ও তোরাবগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা এক ঘন্টা সকল প্রকার দোকান-পাট বন্ধ রেখে মানববন্ধনে অংশ নেন।
পরে একই দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনের বিভিন্ন স্পটে বক্তব্য রাখেন কমলনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ শামছুল আলম, ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা হুমায়ুন কবির, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা বাশার, উপজেলা নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব, কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ নেতা এডভোকেট আনোয়ারুল হক, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক ও পাটারীরহাট ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট একেএম নুরুল আমিন রাজু, সাহেবেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, শিক্ষক ও সাংবাদিক মিজানুর রহমান মানিক, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাস্টার কামরুল হাসান, উপজেলা বাসদ’র সমন্বয়ক এমএ মজিদ, চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনএম আশরাফ উদ্দিন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাস্টার আলতাফ হোসেন, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন নীরব প্রমুখ।
উপজেলা নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব জানান, ‘লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলা এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষাকল্পে নদীর তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প নামে এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পাস হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালের আগস্টে প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য ১৯৮ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত এ টাকায় রামগতি উপজেলার রামগতিরহাটে এক কিলোমিটার, আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার এবং কমলনগর উপজেলায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকার সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধের কাজ শুরু করেন। কিন্তু একই সময়ে বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগর উপজেলার এক কিলোমিটার বাঁধের নির্মাণ কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ‘ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পান। সে অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য কয়েক মাস ধরে মেঘনার তীরে বালু, জিও ব্যাগ ও পাথর মজুদ করে রাখলেও এখন পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেনি। যে কারণে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ে তীরে মজুদ রাখা ওইসব মালামাল এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাঁধ নির্মাণ কাজে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়ায় কমলনগর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণের দাবিটি এখন কমলনগর উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এ দাবি আদায়ের লক্ষে মানববন্ধন শেষে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম মজুমদারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনতিবলম্বে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের কাজ শুরু না করলে আমরা পুরো উপজেলায় বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ এমনকি হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম মজুমদার স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বাঁধ নির্মাণ কাজে কালক্ষেপণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক মোঃ কামরুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কাজ শুরু করার জন্য বিভিন্ন মালামাল মজুদ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
একই কথা জানান লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী। তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণের বালু ও জিও ব্যাগ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।
-মিজানুর রহমান মানিক