Sun Mercury Venus Ve Ves
বিশেষ খবর
‘লক্ষী’ থেকে লক্ষীপুর, যার আরেক নাম সয়াল্যান্ড  লক্ষীপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে ৫০ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা  ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ  আ’লীগ আবারও ভোট চুরির পরিকল্পনা করছে - লক্ষীপুরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী  শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে বাংলাদেশে দিবাস্বপ্ন দেখার কোনো কারণ নেই - লক্ষীপুরে মাহবুব উল আলম হানিফ 

পৌরসভা নির্বাচনে ফেনীর হেভিওয়েট প্রার্থীদের ব্যস্ততা

ফেনীতে পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট নেতারা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তের পর দলের সমর্থন আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে সিনিয়র নেতাদের আশীর্বাদ অর্জনের প্রতিযোগিতা। পিছিয়ে নেই বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নেতারাও। নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা বিএনপি নেতারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আড়ালে।
হাইকমান্ডের নির্দেশ পাওয়া মাত্র প্রকাশ্য প্রচারণায় নামবেন তারা। মেয়র পদে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বর্তমান মেয়র ও জাতীয় পার্টির নেতা হাজি আলাউদ্দিন তৎপর হয়ে উঠেছেন। শুধু মেয়র পদের প্রার্থীরাই নন, পৌর নির্বাচন কেন্দ্র করে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও সক্রিয় হয়েছেন প্রচারণায়। ফেনী বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। তবে গত কয়েকটি পৌর নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর। ২০০৪ সালের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির নুরুল আবসার। ২০১১ সালে বিপুল ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীকে হারিয়ে পৌর মেয়র হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংসদ হওয়ার আগে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। উপনির্বাচনে বিএনপির আলালউদ্দিন আলালকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি আলাউদ্দিন মেয়র পদে বিজয়ী হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন হাজি আলাউদ্দিন। গতবার ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার তিনি কোন্ দলের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হবেন, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। হাজি আলাউদ্দিন বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থীতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোন্ দল থেকে নির্বাচন করবেন, তা এখনই জানাতে চান না তিনি। জানা গেছে, আগামী পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতার ব্যাপারে নিজ দল জাতীয় পার্টি নয়, হাজি আলাউদ্দিন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন।
কিন্তু জাতীয় পার্টির নেতা হয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থন তিনি কীভাবে পাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে চাইলে আলাউদ্দিনকে পৌর আওয়ামী লীগের কাছে মনোনয়ন চাইতে হবে। এজন্য তাকে আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে হবে। আবদুল করিম নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার ক্ষমতা পৌর কমিটিকে অর্পণ করেছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের সমর্থন নিশ্চিতের জন্য মাঠে নেমেছেন বলেও জানান তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের সবার নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, সবাই তার পক্ষেই কাজ করবে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের মতো পৌরসভা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হবেন বলে বিশ্বাস আবদুর রহমানের।
অন্যদিকে ক্ষমতসীন দলের স্থানীয় সূত্র জানায়, দলীয় প্রতীকে ফেনী পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য অন্তত আধ ডজন প্রভাবশালী নেতা তৎপরতা শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট আক্রামুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, আবু সুফিয়ান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনূল কবির শামিম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বাহার উদ্দিন প্রমুখ। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির আদেল ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যা মামলায় জেলে আছেন। দলের সমর্থন লাভের জন্য সমর্থকদের দিয়ে সাংসদ নিজাম হাজারীর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য নেতারাও আছেন প্রচারণায়। পাশাপাশি যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে। কেউ কেউ সমর্থকদের নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখাও করেছেন এরই মধ্যে।
অন্যদিকে গত দুটি পৌরসভা নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ হিসেবে অভিহিত করে ফেনী জেলা বিএনপির সেক্রেটারি জিয়া উদ্দিন মিস্টার বলেন, ব্যাপক কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে ভোটগ্রহণের দিন সংবাদ সম্মেলন করে দুই নির্বাচন থেকেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের নামে পৌরসভা নির্বাচনকে সরকার প্রভাবিত করার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের। তিনি বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনও প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে স্থানীয় বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা চূড়ান্ত হবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী। যদি অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে জেলা বিএনপি সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান আবু তাহের।
যদিও বিএনপি নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনে অংশ নিলেও দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বেশ বেগ পেতে হবে। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী জানান, ফেনীতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শত শত মামলা রয়েছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে গত নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আলাল উদ্দিন আলাল অন্তত ১৫টি মামলা মাথায় নিয়ে পলাতক রয়েছেন। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী পলাতক। অনেকে আছেন জেলে। যারা জেলের বাইরে আছেন, তাদের পক্ষেও প্রকাশ্যে আসা সম্ভব হচ্ছে না। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামে কৌশলে মামলা করে রাখা হয়েছে বলে দাবি যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেনের। তবে নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয় হবে বলে আশাবাদী তিনি।